ঘড়ির alarm বেজে উঠলো কানের কাছে । অনিচছা থাকতেও চোখটা খুলতে হলো, কোনদিনই গূণবতী মেয়েদের মতন ভোরে ওঠার অভ্যাসটা আমার ছিলো না আর আজও নেই। মায়ের ডাকটা কানে আসতেই ঘুমের ঘোরটা কাটলো। আজ যে আমার দুই দুটো ইনটারভিউ, একটাতে পাশ না হলেও চলবে কিন্তু আরেকটাতে উত্তীর্ণ হতেই হবে । Masters কমপ্লিট করে বাড়িতে বসে চাকরির চেষ্টা করছিলাম । আজ রিটেন পরীক্ষা । সেটা নিয়ে অবশ্য কারোর ভ্রুক্ষেপ নেই বিন্দু মাত্র। চিন্তার বিষয় হলো আজ সন্ধ্যায় যারা আসছেন তাদের নিয়ে।

যথারীতি রেডি হয়ে বাবার হাত ধোরে গেলাম পরীক্ষা দিতে । শুনতে বোকার মতো শোনালেও হাত ধোরে হাটার অভ্যাসটা আমার বরাবরের । শুনেছি ছেলে থাকে বাইরে সুতরাং আমার পরীক্ষা না দেওয়াই ঠিক ছিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মায়ের হলদে শ৷রিতে একটু  অনন্যা লাগছিল আমায়। উনারা এসে গেছেন। এক অজানা ভয়ে গা টা সিউরে উঠলো, বোসলাম সবার সামনে গিয়ে। আমার নাম জানতে চাওয়ায়, বিনম্র ভংগিতে উত্তর দিলাম ণীল। মা বললেন কুশলকে বাড়িটা দেখানোর জন্যে, যদিও এর মধ্যম অর্থ জানতে উভয়ের আর দেরি হলো না। আমার ঘরে তানপুরাটার দিকে নজর পরতেই কুশল জানতে চাইল, “আপনি গান করেন ? “আমি মাথা নাড়লাম । সে টেবিলের ওপর অযত্নে পরে থাকা বইগুলো নাড়তে লাগলো। দুজনেই নিশ্চুপ,……. খানিকটা সময় কেটে গেল । মায়ের ডাক কানে পৌঁছতেই নিচে নামি দুজনেই ।

আজ বাড়ির আলোচ্য বিষয় হল-কুশল । অধ্যাপক, একই ছেলে, নম্র, ভদ্র, বিশেষ বিশেষ বিশেষন ব্যবহার করল সবাই।বিশেষত মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাবা একটু চুপ, হয়তো মেয়েকে এতদুর্ পাঠানোর ভাবনাটা মনের কোথাও বঁ৷ধছিল।মনের মধ্যে হাজার প্রশ্ন উঁকি দিতে সুরু করল । ঘরে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে চোখে পরে কৌশিক দার নম্বরটা । আজ যে স্বপ্ন মা দেখছে, সেই স্বপ্নই আজ থেকে চার বছর আগে আমার চোখে ছিলো কৌশিক দা কে ঘিরে। যখন কাজের জন্যে ওকে মুম্বইয়ে যেতে হয়, তখন আমার চোখে চোখ রেখে আশ্বস্ত করেছিল-“এই মনের গভীরে তুমি ছাড়া আর কেও থাকবে না”। শুধু অস্ফুট স্বরে বলেছিলাম -“আমি অপেক্ষায় থাকবো “।

ট্রেন ছেড়ে দিল, আমার সারা শরীরকে অবসন্নতা গ্রাস করতে লাগলো । কোনমতে নিজেকে সামলে বাড়ি ফিরেছিলাম ৷ অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই দূরত্ব শুধু জায়গার নয়, মনেরও বারিয়ে তুললো। কিছুদিন পর শুনলাম ও ওখানে লিভটুগেদার করছে। সত্যতা যাচাইয়ের সব রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছিল সে। আমার সেই দিনের কস্টটা মায়ের চোখ এড়িয়ে যায় নি। জরিয়ে ধরে কেঁদেছিলাম অনেক, বলেছিলাম -“মা রেজাল্ট টা ভালো করতে পারলাম না গো”।

কিন্তু কেন মনে করছি অতিত কে।বুকটার মধ্যে কেঁপে উঠল, তাহলেকি ভুলতে পারিনা আমি তাকে?

মনের ভিতর এক প্রবল ঝড় উঠতে লাগলো, মনের সাথে চোখের যে কি যোগ জানিনা, চোখের জলে সব ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলাম। অস্থিরতার সাথে phone টা ছুঁড়ে ফেলতেই -টেবিলের ওপর থেকে একটা card পরলো। অনিচ্ছার সাথে শুয়েই তোলার চেষ্টা করলাম, পারলামনা, অগত্যা নামতে হল। card টা তুলতেই চোখে পরলো-Astt. Professor Dr. Kushal Roy. ৷ তার নিচে ফোন নম্বরটা । পাশে লেখা রয়েছে-“আমি অপেক্ষায় থাকলাম “। সারারাত এক টানাপোড়েনে কাটলো।

ঘুমাচ্ছোন্ন অবস্থায় শুনতে পেলাম নিচে হইচই এর শব্দ, কান পাততেই বুঝলাম এটা আনন্দের পূর্বাভাস । ভেনটিলেটর দিয়ে এক চিলতে রোদ চোখে এসে পরলো। যেন কেও এক বার্তা প্রেরণ করেছে আমার জন্যে….

 

~ ভোরের আলো ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleবিসর্জন
Next articleঅমরকণ্টক ভ্রমণ
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments