গল্প তো তখনই শুরু হয়ে যায় যখন একটা প্রাণের সঞ্চার ঘটে, কিন্তু গল্প গুলো রঙিন হয় যখন প্রেমের পরশ প্রাণে লাগে।
সোনা, নামটা খুব ছোটই কিন্তু এই নামটা উচ্চারণ করলে বড় তৃপ্তি হয় মিঠাই এর। সোনা আর মিঠাই এর বন্ধুত্ব শুরু হয় আজ থেকে বছর চারেক আগে ইংরাজী পড়তে গিয়ে। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সোনা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, মিঠাই ও চলে যাবে পড়তে শহরের বাইরে।

শ্রাবনের মেঘলা দিনটা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে, মনে তোলপাড় চলছে শান্ত মেয়ে সোনার। কি করবে সে! যাবে! না যাবে না! এই ভেবে যাচ্ছে। কাল অনেক দূরে চলে যাবে মিঠাই, চেনা এই শহর ছাড়িয়ে। দেখা না করলে মিঠাইয়ের মন খারাপ করবে, এই ভেবে আর দেরী না করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পরল সে।

বাড়ির গেটের সামনেই দাড়িয়ে মিঠাই, সোনাকে দেখে রীতিমত চমকে উঠে তাড়াতাড়ি তাকে বাড়িতে নিয়ে গেল। বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতেই ঝরো হাওয়া বয়ে গেল, মেঘলা বিকেলের সাধারন এই হাওয়া যেন আজ বড়ই বেদনাদায়ক। মনটা হূহূ করে উঠল সোনার।

সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে ভীষণ আনন্দ অনুভব করল সে। কত দিনের ইচ্ছা ছিল মিঠাইয়ের ঘর দেখবে। কাল তার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে মিঠাই আর আজ তার সেই ইচ্ছা পূরণের সময় হল। তারা গিয়ে বসলো মিঠাইয়ের ঘরে। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা দুঃখ, আর অনেকটা হাহাকার – সোনাকে স্তব্ধ করে দিচ্ছিল। মিঠাই বলে উঠল, ‘নখ কেটেছি, তুই আসবি বলে।’ সোনা হেসে উঠল।

নিজের হাতে বানানো কার্ড টা দিল। মিঠাই খুব আগ্রহসহকারে কার্ড এর লেখাটা পড়ে সোনাকে মজার ছলে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে অপেক্ষা করবে আমার জন্য? তুই?’ সোনা একটু লজ্জা পেয়ে গেল, কিন্তু রাগ দেখিয়ে বলল, ‘আমি কেন করতে যাব? যে করার সেই করবে।’

মিঠাইয়ের মা দিবানিদ্রা সেরে ঘরে এসে বললেন, ‘সোনা এসেছিস!’ গালের কাটা দাগের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মিঠাই খুব খুশি হয়ে আমায় বলছিল ঠিক হয়েছে পড়ে গেছে।’ সোনা রেগে কট্মট করে তাকাল বন্ধুর দিকে। মা চলে গেলেই দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে এল ঘরের মালিক।

পিসিমনি এসে চা দিয়ে গেল, সঙ্গে নারকেল নাড়ু। দুই বন্ধুর হাসিতে আর গল্পে গোধূলি কেটে সন্ধ্যা নামতে লাগলো। চা, নাড়ু কখন শেষ হয়ে গেছে,বুঝতেই পারেনি তারা।

মিঠাই এবার একটা ছোট্ট পুতুল তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘গীতায় যেমন হাত দিয়ে কোর্ট-এ দাঁড়ায় তেমন ভাবে হাতটা রাখ।’ সোনা অবাক হয়ে বলল,’কেন? মাথাটা খারাপ নাকি তোর!’ মিঠাই শাসিয়ে বলল, ‘রাখ তো!’ সোনা যেই হাতটা রাখবে এমন সময় হাতটা ধরে নিল মিঠাই। সোনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলে ওঠে, ‘আই লভ ইউ। ডু ইউ লভ মি?’

সোনা কোন উত্তর না দিয়েই হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে, মিঠাই তার হাতটা আর ও শক্ত করে ধরে সোনার চোখে চোখ রেখে বলে উঠল, ‘ডু ইউ লভ মি?’

সোনা প্রথম বড় ব্যাচে পড়তে শুরু করেছিল, অনেক ছেলে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। ছোট থেকেই বালিকা বিদ্যালয়ে পড়া লাজুক মেয়েটি সেদিন ওই ব্যাচে প্রথম যে নাম টা শুনেছিল সেটা ছিল – মিঠাই। কিন্তু বন্ধুত্ব হয় ইংরাজি ব্যাচে। আস্তে আস্তে প্রিয় বন্ধু আর আরও পরে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু।

সোনা খুশিতে পাগল হয়ে উঠল কিন্তু প্রকাশের ভাষা গেল হারিয়ে। আনন্দে দিশেহারা হয়ে হাসতে হাসতে বলল, ‘হ্যাঁ, আই লভ ইউ।’

কতক্ষণ একে ওপরের পানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, তারপর দুজনের আঁখি-পাখি উড়ে গেল জালনার বাইরে গোধূলির শেষ রক্তিম আভার পানে। ঠাণ্ডা আদ্র বৃষ্টি ভেজা বাতাস বয়ে চলেছিল দুজনের দুটি মনে।

 

~ গোধূলি বেলার সোনালী রদ্দুর ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleচলমান কলকাতা
Next articleস্বপ্নের হাতছানি
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments