খারাপ সকাল, ভালো দিন (প্রথম পর্ব)  – click here

।তিন।

নাঃ এই রাস্তায়ও আর হাঁটার যো নেই। একটু অন্য মনস্ক ভাবে খানিকটা দূর যেতে না যেতেই গৌরী প্যাচ করে নোংরা জল মারিয়ে ফেললেন। দূর দূর … কলকাতার রাস্তায় আর হাঁটার সুখ নেই। কোথাও ডাঁই করা নোংরা তো কোথাও কুকুরের গু … কোথাও বা কাদা আর কোথাও বা জল জমে আছে। এখন এই নটা কুড়ি মতো বাজে, রাস্তার পাশের দোকানিরা সবে দোকান খুলতে শুরু করেছে। আর ওদের কি একটা রেওয়াজ, দোকান খুলেই দোকানের সামনে খানিকটা জল ছিটিয়ে দেয়। আর এ রাস্তা কি আর সেই রাস্তা … কয়েক বোতল জল দিতেই ফুটপাথের পাশে খানিকটা জমে যায়। এই ব্যাপারগুলো গৌরী ভালোই জানেন, কিন্তু ঠিক জলটা পাশ কাটাতে যাবার আগেই পাশে স্পীডে একটা অটো এসে পরলো, আর একটু বাঁ দিকে সরে আসতেই জলে পা … পাজামার নিচটা একটু ভিজল। রাগের চোটে মুখ দিয়ে “শালা” … “বাঞ্চোত” শব্দগুলো বেরিয়ে আসছিল, কোন রকমে সামলালেন। এই পঞ্চাশোর্ধ বয়সে সবাই যখন “দাদা” “কাকা” বলে ডাকে তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গালাগাল দেওয়াটা তেমন ভালো দেখায় না। তাছাড়া অটো ড্রাইভাররাও তেমন যুধিষ্ঠীর মার্কা ভদ্রলোক নয় … ঘুরে দাঁড়িয়ে দুটো বস্তি মার্কা খিস্তি করে দিলে খারাপই লাগবে। শুধু খুবই নিম্নস্বরে “শুয়োর” কথাটা বলে আবার বাজারের পথে হাটা লাগালেন। বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের মাথা অনেক দিনই নোয়ান, শিরদাঁড়া অনেকদিন আগেই ভেঙে গেছে।

ডান দিকে সামান্য ঘুরে ঠিক যখন মাছের বাজারে ঢুকতে যাবেন … ব্যাস, বলরামবাবু। ওঃ আজকে ভগবান বোধহয় সারাদিন এই রকম জ্বালিয়েই মারবেন। সাত সকালে কেয়ার সাথে ঝগড়া, এমনিতেই মেজাজ গরম আর তার ওপর অফিসের দেরি হয়ে গেছে … মনের মধ্যে কোথায় যেন বড়বাবুর গোল গোল চোখ নেচে বেড়াচ্ছে। কোথায় স্যাট করে মাছ আর কুমরো উচ্ছে কিনে বাড়ীর দিকে দৌড়বেন … নাও, এখন কম করে বিশ মিনিটের ধাক্কা।

বলরামবাবুর কথা বেশি কি আর বলবার। ছফুটের ওপর লম্বা মুশকো জোয়ান, মারুতী এইট হান্ড্রেডের একটা কালো রঙের মডেলের মতো গায়ের রঙ, চোখ দুটো বেশ বড় বড় আর চোখের কোনের কাছটা সর্বদাই লালচে হয়ে আছে। নামের সাথে রাম কথাটা জড়িয়ে থাকলেও সাতজন্মে কেউ ওনার মুখ দিয়ে রামনাম শোনেনি। অবশ্য তাতে পাড়ায় ওনার সম্মান কিছুই কমেনি। ভদ্রলোক রিটায়ার করেছেন বেশ কয়েক বছর, টাকার কুমির … পাড়ার পূজো, ডান বাঁ মধ্য সব রকম পলিটিক্যাল পার্টিতে প্রতি বছর বেশ মোটা চাঁদা দেন কাজেই আসে পাশের বেশ কিছু অঞ্চলে ওনার দারুণ খাতির। পাড়ার প্রায় সব লোককে তুই অথবা তুমি-তে সম্বোধন করেন … আপনি বলার যোগ্য বোধহয় কাউকে পান না। বলরামবাবু কাস্টমস-এ চাকরী করতেন, তাও বেশ সাধারণ পোস্টে … মানে একজন অর্ডিনারি গ্র্যাজুয়েট যে ধরনের পোস্টে চাকরী করে থাকে। ওনার এতো টাকার সোর্সটা নিয়ে অবশ্য কানাঘুষো কিছু হয় কিন্তু কারণটা প্রকাশ্যে মুখে আনলে পাছে কেউ কেউ লজ্জা পায় তাই বলা বারণ আছে … কে আর এই বাজারে কারণে অকারণে কয়েকটা একশ টাকার পাত্তি মিস করতে চায়। ভদ্রলোকের আরো একটা গুন হোল তিনি মাঝে মাঝেই রাত্রের দিকে একটু জলপথে থাকেন এবং ঝগড়া বাধলেই বউকে বেদম পেটান। এগুলো সবাই জানে কিন্তু এ ব্যাপারেও পাড়া একদম চুপ। আসলে পয়সা জিনিসটা অনেকটা হ্যারী পটারের ম্যাজিক ওয়ান্ডের মতো … বেশ বেশী পরিমানে থাকলে চরিত্রের অনেক দোষই বেবাক অদৃশ্য করে দেয়। হ্যারী পটার লিখতে লিখতে জে . রাওলিং যা পয়াসা করেছেন একদিন তিনি নিজেই না অদৃশ্য হয়ে যান, সেটাই ভয় হয়।

বলরামবাবু গৌরীকে দেখেই লাফিয়ে এগিয়ে এলেন, নানা ব্যাপারে বড়াই করা তাঁর সহজাত।

বলরাম। এ্যাই যে গৌরী, বাজারে এলে নাকি?

গৌরী মনে মনে ভাবলেন – ন্যাকা, সকাল সাড়ে নটার সময় হাতে খালি ঝোলা নিয়ে লোকে বুঝি সিনেমা দেখতে যাচ্ছে। কিন্তু মুখে একটা কৃতার্থের হাসি ফুটিয়ে বললেন …

গৌরী। আপনার সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো হোলো বলরামদা। এই এদিকে একটু আসলাম যদি মাছ টাছ কিছু কিনতে পারি … একটু টিপস দিন না। আপনার তো বোধহয় কেনা হয়ে গেছে।

বলরাম এই কথায় বেশ খুশী হোলেন। টিপসের ব্যাপারে ওনার জুরি নেই। দুনিয়ার কিছুই বলরামের আয়ত্বের বাইরে নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশান থেকে বিরাট কোহলীর ব্যাটিং টেকনিক, দলাই লামা সকালে উঠে কতক্ষণ ধ্যান করেন সে খবর থেকে রামানুজমের ম্যাথামেটিক্যাল থিওরী, লতা মঙ্গেসকরের প্রেম থেকে অমিতাভ বচ্চনের ভয়েস এক্সারসাইজ, এরিয়া ফিফটিওয়ানে সত্যি এলিয়েন ছিল কিনা সেই খবর থেকে জে. এফ. কেনেডির মৃত্যু রহস্য … সব খবরই বলরামের ঠোঁটের ডগায় … আর এই সামান্য মাছের বাজার।

বলরাম একটু মুরুব্বিচালে হেসে বললেন – আজ একটু মন্দা বুঝলে। তাহলেও, ওদিকে মোহনের কাছে চলে যাও … বেশ ভালো বড় বড় কাতলা এনেছে। খেয়ে শুখ পাবে।

গৌরী একটু খুক খুক করে কাশলেন … বড় বড় কাতলা মাছ … হুঃ। মাসের আজ বাইশ তারিখ … বলে কিনা বেলে, লইট্যা বা তেলাপিয়া কিনতে পারলেই অনেক, আর কাটা মাছ। যাই হোক, কথা বারিয়ে লাভ নেই। রোদ বেড়ে যাচ্ছে, তায় আবার অফিসের দেরি আর দেরি মানেই বাসে ভিড়। গৌরী গলাটা একটু ঝেড়ে বললো …

গৌরী। তা যা বলেছেন বলরামদা। তবে মাসের এই শেষে কি আর কাতলা খাওয়া যায়, আমরা আর কত মাইনে পাই। তবে বলেছেন যখন যাবার সময় কাতলাগুলোর চেহারাটা একবার দেখে যাব।

মনে মনে গৌরী বললো “তোমাদের মতো ঝাড়া তো আর আমাদের জীবনে হয়ে উঠলো না, কি আর করা”। এই সব কথা বলতে বলতে গৌরী কেটে পড়ার তালে ছিলেন। কিন্তু বলরামের এখন হাতে অঢেল সময় … রিটায়ার্ড মানুষ, খানিক পরেই গিয়ে বাস রাস্তার চায়ের দোকানে আড্ডা জমাবেন। এগাড়টা বাজলে হেলতে দুলতে অটো স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াবেন, সেখানে দুজন ওনার পেয়ারের অটোওয়ালা আছে যারা চার জনের জায়গায় ওনাকে নিয়ে তিনজন যাত্রীকে নিয়ে যাবে। বলরামের নাকি গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে ভালো লাগে না। অবশ্য শোনা যায় যে বলরাম নাকি নিজেই দুজনার ভাড়া দিয়ে দেন। গৌরী একটু নরে পাস কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই বলরাম ওর নড়াটা খপ করে চেপে ধরলো …

বলরাম। আরে যাচ্ছ কোথায়, শোন শোন। আর খাবার কথা কি বলছিলে … আরে না খেয়ে টাকা জমিয়ে তো কেমন শুকিয়ে চামচিকের মতো হয়ে যাচ্ছ। খাওয়া দাওয়া-টা একটু ভালো কর। ঠিক আছে, কাতলা যদি বা নাই খেলে, পাবদা বা চেতলও দেখতে পারো। সব কিছুই দেখে এলাম। নিদেন পক্ষে কই বা শিঙ্গি-তো চলবে, নাকি?

গৌরী মুখে কিছুই বললো না, সেই ছোটদের ঘাড়ে স্প্রিং খেলনা বুড়ো যার মাথায় একটু টোকা দিলে পাঁচ মিনিট ধরে মাথা নড়ে সেই রকম কয়েকবার মাথা নারলো। বলার আর আছেই বা কি … কই বা শিঙ্গি … মামার বাড়ীর আহ্লাদ, তাও তো চারশো টাকা কিলো। বরঞ্চ গুলে মাছের কথা ভাবা যেতে পারে … কিন্তু এসব কথা ওনাকে বলা যায় না। তাছাড়া গৌরীর একটু দুর্বলতাও আছে, বছর তিনেক আগে বলরামের কাছ থেকে হাজার পাঁচেক ধার নিয়েছিলেন কেয়ার হাঁটুর ব্যাথা সারাতে … ডাক্তার তো বাতই বলেছিল, হাজার রকম মলম আর ফিজিও থেরাপির ঠেলায় যাকে বলে ত্রাহি মধুসূদন। সেই সময় টাকাটা নিতেই হয়েছিল কিন্তু তার বোধহয় এখন হাজার দেড়েক শোধ দেওয়া বাঁকি। কাজেই মেলা রোয়াব নিয়ে “সময় নেই” বলে চেলে যাওয়াও চলে না।

কিন্তু যেতেও তো হয়, তাই না? ঘড়িতে নটা চল্লিশ ছুঁই ছুঁই, ওনারা দুজন কেমন দ্বীপের মতন দাঁড়িয়ে আর ওদের আশ পাশ দিয়ে স্রোতের মতো মানুষের ঢল বেরিয়ে যাচ্ছে হাতে নানা সাইজের ঝোলা নিয়ে, কেউ কেউ বা আবার দুহাতে দুটো ঝোলা নিয়েছে। নাঃ … গৌরী একটু অস্বস্তিতেই পরে গেলো। আর বাস্তবিকই দাঁড়ানো চলে না … অপিসের নতুন বড়বাবু আবার ঠিক দশটায় কেবিনে ঢুকে পড়েন। আর গৌরীর তো আজ এগারটাতেও আপিসের খাতায় সই করতে পারবেন কিনা সন্দেহ। গৌরী একটু গলা ঝেড়ে শুরু করলেন …

গৌরী। বুঝলেন বলরামদা, একদিন সন্ধ্যে বেলায় আপনাদের বাড়ীতে যাব, কিছু কথা আছে। আজকে বরঞ্চ এগোই বুঝলেন, আমার আবার আপিসের ব্যাপার ট্যাপার …

কথাটা শেষ হোল না, বলরাম নিজেই কথাটা শেষ করলেন …

বলরাম। অ … বুঝিছি, তাড়া আছে … তাই তো? তাভালো … তাভালো, তোমাদের তো আপিসের ব্যাপার, আমার তো ও পাট কবেই চুকে গেছে। তা যাও, তবে মাছের বাজারে ঢুকেই কোনার দিকে দেখবে একজন ঝুড়ি করে টাটকা মৌরলা নিয়ে বসেছে। একবার দেখে নিও যদি ইচ্ছা করে …। আমিও যাই … দেখি শ্যামলের দোকানে এক কাপ চা খেয়ে বাড়ীর দিকেই যাই।

কোথায় আর গেলেন, গৌরী কয়েক পা গিয়েই স্যুট করে একটা ঝুপরি দোকানের পাশ থেকে ঘাড় ফিরিয়ে দেখলেন বলরাম একটা ফলের দোকানে দাঁড়িয়ে পরেছে …

বলরাম। হ্যারে পলাশ, আজকে আপেল কত করে যাচ্ছে?

গৌরী আর দাঁড়ালেন না, সোজা হন হন করে মাছের বাজারের দিকে হাঁটা লাগালেন। যত্ত সব, আবার বলে মৌড়লা, তা সেও তো কম করে কুড়ি টাকা শ … টাকা থাকলে লোকে বড্ড বেয়াক্কেলে হয় যা হোক …।

।চার।

আজকে অফিসে ঢুকতে ঢুকতে গৌরীর এগারটা দশ বেজে গেল। তা তো বাজবেই, আর অফিসে ওনাদের ফ্লোরে ঢুকতে প্রথমেই বড় সাহেবের সাথে চোখা চোখি। ধ্যাততেরিকা, মেজাজটাই খিচরে গেলো … অফিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশান এতো সুন্দর একটা কেবিন দিয়েছে … এ.সি., সাদা ফুলকাটা টাইলসের মোজায়েক, সুন্দর লেদার ডাবল সোফা … মানে যাকে বলে আরামের নন্দন কানন। তো সবই বোঝা গেলো কিন্তু ঘরের দরজাটা খুলে রাখার কি খুব দরকার ছিল?

বাজার করে ফিরতে ফিরতে গৌরীর প্রায় সোয়া দশটা হয়েছিল। তারপর একটু জল ছিটিয়ে চান করে গত কালের মাছের ঝোল আর ভাত একটু নম নম করে খেয়ে সোজা মেট্রো স্টেশান। কিন্তু এতো করেও এগাড়োটা ক্রস করে গেলো। এস্প্ল্যানেড মেট্রো স্টেশানে নেমে প্রায় দৌড়, বলা যায় উড়েই অফিসের দোর গোরায়, সেই বিখ্যাত লাল বাড়ী, ট্রেজারী বিল্ডিং। তারপর ঘামতে ঘামতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলার ফ্লোরে ঢুকতে গিয়েই এই বিপত্তি। কি আর করা, সোজাসুজি চোখ পরে গেলো তাই মাথাটা একটু নামিয়ে নমস্কারের ভঙ্গি করে গৌরী তার কোনার টেবিলে গিয়ে বসলেন, এটাই তাঁর আশ্রয় গত আট বছর।

********

গায়ের হাত কাটা সার্টটা ঘামে ভেজা, ভিতরের গেঞ্জিটাতো ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে। আগেকার দিনের ব্রিটিশ আমলের বাড়ী … সেই উঁচু সিলিং থেকে লোহার লম্বা ডান্ডায় ফ্যান ঝোলান, তাতে আর কতটুকু হাওয়া পাওয়া যায়। তাও যা পাওয়া যায় তাতেই মানিয়ে নেওয়া, আর কটাই বা বছর গৌরীর আছে … কয়েক বছর পরেই তো রিটায়ারমেন্ট। ওদিকে সমীরের সিটের পাশে তাও একটা পুরনো মাটিতে বসান টেবিল ফ্যান রয়েছে, ঠক ঠক আওয়াজ করতে করতে ঘোরে, যেন সেও বুড়ো বয়সে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তবুও কিছুটা বেশী হাওয়া তো পাওয়া যায়ই।

মরুকগে, যা পাওয়া যাচ্ছে তাই অনেক। গৌরী পকেট থেকে রুমাল বার করে একবার মুখের ঘাম মুছে নিলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার সমীরের দিকে ভ্রুকুটি করে চাইলেন, আগের বড়বাবুর পেয়ারের লোক, এক নম্বরের ধরিবাজ। কিন্তু অবস্থা দেখো, এতো আরাম সত্ত্বেও ফাইলের ফাঁকে খবরের কাগজ রেখে ঠিক মৌজ করে পড়ে যাচ্ছে, পাশ থেকে দেখলে মনে হবে কি মন দিয়েই না ফাইল ঘাঁটছে। চুলগুলো হাওয়ায় ফুরফুর করে উঠছে, গলার কাছে সার্টের প্রথম বোতামটা খোলা, সাদা গেঞ্জী আর তার ওপর সাদা সাদা পাউডারের ছাপ দেখা যাচ্ছে। গৌরী কপালটায় একটু আঙুল বোলালেন – “বড় মজায় আছিস রে ভাই, ঠিক ঠাক ফ্যামিলিতে জন্মেছিলি …”। গৌরীর সব সময়েই এই সব সফল পরিবারের ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে মনে হয় এদের জন্য যেন জন্মের আগেই কেউ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল, জন্মেই সুদ পেতে শুরু করেছে, একেবারে মজাহি মজা।

এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গৌরী তাঁর প্রথম ফাইলটা খুললেন। কিন্তু খোলাই সার, ঠিক সেই মুহুর্তে … অম্বরীশ, এই ফ্লোরের টি সাপ্লায়ার ঠক করে একটা ফাটা কাঁচের ডিসের ওপর একটা কালচে মারা কাপে চা দিয়ে গেলো। আসলে ঠিক দিয়ে গেলো না, কাপটা নামিয়ে দিয়ে টেবিলের কাছেই দাঁড়িয়ে রইল। গৌর আর চোখে একবার কাপের দিকে চাইলেন, সেই এক ব্যাপার। কতবার বলেছেন যে ওরে দুধটা একটু ছেঁকে দিবি … কে কার কথা শোনে। আজও ঠিক তাই, ছোট ছোট সরের কুচি চায়ের কাপে গোল হয়ে ঘুরছে অনেকটা চাঁদ যেমন পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। গৌরীর ভুরুটা কুচকে গেলো …

গৌরী। আচ্ছা, অম্বু, তোকে কতবার বলেছি দুধটা একটু ছেঁকে দিবি, শুনিস না কেন?

অম্বরীশ। ভুলে গেছি গৌরীদা … এতো দিকে মন দিতে হয়, সবারই তো নানা ফরমাস … ।

গৌরী একটু রেগে বললেন – তা তো করবেই, তোর কাজই তো এই ফ্লোরের চা বিস্কুট দেওয়া, নয়? সরকার মাইনেও তো দেয় তার জন্য … কি দেয় তো?

অম্বরীশ। রাগবেন না গৌরীদা, বললাম না … ভুলে গেছি। এর পরের বার আপনাকে দুধ ছেঁকে চা এনে দেব, ঠিক আছে?

গৌরী প্রথম চুমুকটা মারলেন, … তা ছেলেটা চা মন্দ করে না, ওই সরটুকু বাদ দিয়ে। মুখ দিয়ে তুপ করে কেমন একটা আওয়াজ করে সরের টুকরোটা ফেলতে ফেলতে বললেন …

গৌরী। মনে রাখিস, এখন যা তো দেখি … সবে একটা কাজ ধরেছি, এখন বকাস না।

অম্বরীশ কিন্তু গেলো না, টেবিলের পাশে দাঁড়িয়েই বেশ দাঁত বার করে হাসতে লাগলো। গৌরী ভিতরে ভিতরে একটু অবাক হলেন কিন্তু বাইরে রাগ দেখিয়ে বললেন …

গৌরী। আচ্ছা, কি ব্যাপার অম্বু, সকাল সকাল সময় নস্ট করছিস কেন? একটু কাজ করতে দিবি … নাকি?

অম্বরীশ কিন্তু ঠিক সেই রকম দন্তবিকাশ করতে করতেই জবাব দিল – সকাল আর কই গৌরীদা … আপনি সবে এসে ঢুকলেন বলে কি আর সকাল থাকে … আর দের ঘন্টা পর তো লাঞ্চ টাইম হয়ে যাবে।

গৌরী একটু থতমত খেয়ে গিয়ে বললেন – আচ্ছা, যা দেখি এখন … কাজ করতে দে।

অম্বরীশ কিন্তু আরো কাছে ঘনিয়ে এলো, তারপর গৌরীর প্রায় কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো – আজকের সকালটা কিন্তু আপনার পক্ষে খুবই ভালো গৌরীদা।

গৌরী কেমন বিমূর হয়ে অম্বরীশের দিকে তাকালেন, ফাজিলটা আবার কি ফাজলামি শুরু করলো কে জানে। কিন্তু সেরকম রাগলেন না, ফাইলের দিকে তাকিয়েই বললেন …

গৌরী। এখন যা অম্বু, পরে কথা হবে।

অম্বরীশ এবার যাওয়ার পথ ধরলো, কিন্তু যাবার আগে আবার খুব নিচু স্বরে বললো – আজকে বিকেলে দেখবেন আপনার সব রাগ জল হয়ে গেছে।

(To continue …)

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleখারাপ সকাল, ভালো দিন (প্রথম পর্ব)
Next articleযে পথে করে গমণ ….
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments