<<Previous part

।দুই।

 

গাড়ীতে বসেই দামোদর কয়েকটা ফোন সেরে ফেললেন। তারপর সন্ধ্যেবেলায় মুম্বাইয়ের রাস্তার ভিড় এড়িয়ে গাড়ী চালিয়ে দিলেন, খারের দিকে। মি. ভিভেক আলুওয়ালিয়া দামোদরের বহুদিনের অ্যাডভোকেট, খারে তাঁর বাড়ীর চৌহদ্দির মধ্যে গাড়ী পার্ক করে সোজা তিনতলা বাড়ীর বসার ঘরে ঢুকে পরলেন। সেখানে ভিভেক ওয়েট করছিল, ওরা দুজনে দোতলায় ভিভেকের স্টাডিতে চলে গেলেন।

ভিভেক। কি ব্যাপার দামু, হঠাৎ এমন ঝড়ের মতো এসে পরলে?

দামোদর। সোজাসুজিই তোমাকে বলি, আমি হৈমন্তির থেকে ডিভোর্স চাই কিন্তু কোন খোরপোশ বা সম্পত্তির ভাগ না দিয়ে, ব্যাপারটা সম্ভব কি?

ভিভেক। কোন কারণ ছাড়াই ডিভোর্স চাইছ, তাও আবার খোরপোশ না দিয়ে? পাগল নাকি, সম্পত্তির ভাগও দিতে হতে পারে।

দামোদর। আরে কারণ আছে।

এই বলে বহুদিন ধরে নানা গসিপ ম্যাগাজিনের থেকে কেটে রাখা ফটোগুলো দামোদর টেবিলের ওপর রাখলেন। ভিভেক চশমাটা চোখে দিয়ে একে একে সেগুলো দেখলেন, তারপর দামোদরের দিকে তাকিয়ে বললেন –

ভিভেক। এগুলো তো শুধু ছবিই, দুজনে পাশাপাশি বসে আছে, রেস্তোরাঁয় খাচ্ছে, পার্টিতে নাচছে, এগুলো দিয়ে ব্যাভিচার প্রমান করা যায় নাকি? কোর্ট মানবে না।

দামোদর। আরে বাবা ইনডাইরেক্ট প্রুফ বলে তো একটা ব্যাপার আছে, নাকি? রাত্রে পার্টি করেই কি বাড়ীতে ফিরেছে নাকি, কোথায় কি করে বেরাচ্ছে আমি জানি? যদি কোন হোটেলে গিয়ে থাকে, কে আটকাচ্ছে?

ভিভেক। যেতেই পারে কিন্তু কোর্টের কাছে প্রমান দরকার। কোর্টে তোমার ইমোশানের কোন দাম নেই।

দামোদর। আমি দেখেছি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পার্টিতে কমলেশ হৈমন্তীকে কিস করেছে।

ভিভেক। তার ভিডিও বা স্টীল ফটো কোথায়?

দামোদর। ভিডিও থাকতে পারে, ফিল্মফেয়ার পার্টিতো অনেক চ্যানেলই কাভার করে। টিভি চ্যানেলগুলোয় একটু খুঁজতে হবে।

ভিভেক একটু বাধা দিয়ে বললেন – ভাই, তাতে খুব সুবিধে হবে না। আজকাল মুভি লাইনে এসব চলে। সারা ইনটারনেটই তো মুভি স্টারদের কিসের ছবিতে মঁ মঁ করছে। এসব সহ্য করতে পারবে না তো কচি সুন্দরী অ্যাকট্রেসকে বিয়ে করেছিলে কেন?

ভিভেক একটু থামলেন, তারপর আবার বললেন – সে যদি বল, তোমার “পেয়ার কি নজরানা” ছবিতে কটা কিস ছিল? এন.এফ.ডি.সি.-র অবজেকশানে দুটো বাদ গেলেও আরো তিনটে তো ছিল, আর কমলেশ আর হৈমন্তিই তো ওখানে নায়ক নায়িকা। সেখানে তুমি অবজেক্ট করোনি, কেন? বিজনেসের ব্যাপার, তাই তো? কোর্টে তো এই সব পয়েন্ট গুলো আসবেই।

দামোদর খানিক্ষণ চুপচাপ বসে কফি সিপ করে গেলেন। মনের মধ্যে ধকধকে প্রতিশোধের আগুন কিন্তু আইনে বাধ সাধছে। একটু ভেবে দামোদর মরিয়া হয়ে বলে উঠলেন

দামোদর। ধর যদি খোরপোশ দিতে রাজি হই, তাহলে ডিভোর্সটা করিয়ে দিতে পার? আই ওয়ান্ট টু টিচ হার এ লেসেন। ওকে ভালো লেগেছিল বলে বিয়ে করে আমার ব্যানারে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমি ওর অ্যাকটিং ক্যারিয়ার খতম করেদিতে চাই।

ভিভেক একটু অসহিষ্ণু হয়ে বললো – প্রথম কথা হোল অ্যাডাল্টারি ব্যাপারটা প্রমাণ সাপেক্ষ। যদি ওরা অবজেক্ট করে আর কাউন্টার লজিক দেয় তাহলে কোর্ট তোমার এগেইন্সট-এ রায় দেবে। আর মাইন্ড দ্যাট, একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে “শী ক্যান ওয়ার্ক উইথ এনি আদার ব্যানার, ইউ ক্যান নট স্টপ দ্যাট”। হৈমন্তি একজন ভালো অ্যাকট্রেস, ও কাজ পাবেই। আর তোমার শত্রু প্রোডিউসাররা তো ওঁত পেতে বসে আছে।

হিম হয়ে দামোদর সোফায় বসে রইল, বিয়ের সময় কনট্র্যাক্ট হয়েছিল যে হৈমন্তি বিয়ের পর আর অন্য কোন ব্যানারে কাজ করতে পারবে না, শুধু “ডালমিয়া টকিজ”। সত্যি কথাই যে ডিভোর্স হয়ে গেলে আর কোন কনট্র্যাক্ট নেই, কাজেই শী ক্যান ওয়ার্ক এনি হোয়ার।

মাই গড, এটাই তাহলে রহস্য। দামোদর ভয়ে একেবারে সিটিয়ে গেলেন, ওরা তাহলে এটাই চায়। একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে হৈমন্তির বাজার একেবারে খুলে যাবে, ওর যা ফিজিকাল ফিচার্স আর অ্যাকটিং এবিলিটি, “দেব এনটারটেইনমেন্ট” বা “কাপুর ফ্যানটাস্টিক মুভিজ” ওকে লুফে নেবে। হৈমন্তি রানীর আসনে বসে থাকবে। আর ওই শয়তান কমলেশটা, ও তো সব ব্যানারের সাথেই লেপ্টে আছে। ওফ, হতাশায় দামোদর দুবার কপালে চাঁটি মারলো।

আর দেরি করা যায় না। “কাল অফিসে তোমার সাথে দেখা করবো” বলে দামোদর ভিভেকের বাড়ী থেকে দেরিয়ে এলো। নিজের গাড়ীটা খানিকটা চালিয়ে মুম্বাইয়ের একটু ফাঁকা যায়গায় নিয়ে এসে রাস্তার ধারেই পার্ক করে মোবাইলে কয়েকটা ফোন লাগাল।

 

*******

 

দেব এনটারটেইনমেন্ট-র মিল্টু আনন্দ সন্ধ্যে সাতটায় তার অফিসে মিটিং ডেকেছে। তার চিফ এক্সিকিউটিভরা সবাই হাজির। বাজারে জোর গুজব যে দামোদর ডালমিয়া আর হৈমন্তির ডিভোর্স এবার হচ্ছেই। মিল্টু আর দামোদর যাকে বলে একেবারে আদায় কাঁচকলায়। দুজনে দুজনের ক্ষতি ছাড়া আর কিছু চায় না। মুম্বাইয়ের রীতি অনুসারে দুজনার অফিসেই দুজনার গুপ্তচর রয়েছে, যারা কিছু খবর থাকলেই গোপনে অন্য অফিসে জানিয়ে দেয়।

আজকে এই মিটিং-এ ঠিক হোল যে যদি সত্যিই ডিভোর্স হয়ে যায় তাহলে ইমিডিয়েটলি হৈমন্তিকে লিড রোলে অফার দেওয়া হবে, পরপর দুটো মুভিতে। কন্ট্র্যাক্ট ফর্ম এখুনি প্রিন্ট নেওয়া হবে, শুধু নামটা লেখা আর টাকার অ্যামাউন্টটা লেখার অপেক্ষা। নায়ক অবশ্যই কমলেশ, আর কে। হৈমন্তি আর কমলেশ এক ছবিতে থাকলে হিট আটকায় কে।

কাপুর ফ্যানটাস্টিক মুভিজ এর অফিসেও আজ রীতিমতো ব্যাস্ততা। প্রোপাইটার তনভির কাপুর হাতে ফোন নিয়ে বসে মৃদু মৃদু হাসছেন। তাঁর গুপ্তচর নাথুরাম “ডালমিয়া টকিজ” থেকে ফোন করেছিল যে স্যুটিং সাইট থেকে রেগেমেগে দামোদর সোজা তাঁর লইয়ারের বাড়ী চলে গেছেন, কাজেই কালকেই ডিভোর্সের ব্যাপারটা কোর্টে যেতে পারে, আবার মিউচুয়াল ডিভোর্সও হতে পারে। তনভির বহুদিন থেকেই হৈমন্তির প্রেমে হাবুডুবু, কাজেই যদি সত্যি সেপারেশান হয় তাহলে তনভির প্রথমেই ওকে মুভির অফার দেবে … নিজেরই স্ক্রিপ্ট, নিজেই নায়ক আর হৈমন্তি নায়িকা।

হৈমন্তির সাথে তার বহুদিনের আলাপ, কাজেই প্রেমের ব্যাপারটা হয়তো মুভির সেটেই হয়ে যেতে পারে। তনভির তার অফিসের কলিগদের কাজের কথা বলে এবার নিজের ঘরে গিয়ে কয়েকজন ইয়ার বন্ধুকে ফোন করতে লাগলেন, একটা বড় পার্টি অ্যারেঞ্জ করতে হবে হৈমন্তি আবার সিঙ্গল হয়ে গেলে, সে নিজে তো এখনো সিঙ্গল আছেই।

*********

দামোদর তাঁর নিজের গাড়ীতে বসে প্রথমে মুম্বাইয়ের কয়েকটা গসিপ ম্যাগাজিনে ফোন করলেন, ওখানেও তাঁর পরিচিত লোক রয়েছে। খবর খুব গরম, তাঁর সাথে হৈমন্তির বিচ্ছেদের ব্যাপারটা নিয়ে কাল বেশ কিছু আর্টিকেল বার হচ্ছে, তার সাথে কমলেশ আর হৈমন্তির অন্তরঙ্গ ছবি। দামোদর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, তারপর দেব এনটারটেইনমেন্ট-র ভিমল শ্রীমানিকে ফোন করলেন, ও ওখানকার একজন বড় এক্সিকিউটিভ আবার দামোদরের গুপ্তচর, মানে প্রতিমাসেই শ্রীমানিকে টাকা দিতে হয়, অনলাইনে ওর অ্যাকাউন্টে।

যেরকম আশা করা গিয়েছিল, ওই অফিসেও এখন দারুণ ব্যাস্ততা, হৈমন্তীর নামে নাকি কনট্র্যাক্টও প্রিন্ট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। দামোদরের পরের ফোনটা তনভির কাপুরের অফিসে, গুপ্তচর আবির মুখার্জীকে। সেখানকার খবরও একই রকম, তনভির তার নিজের স্ক্রিপ্টে ছবি তৈরি করছে, হৈমন্তি সেই ছবির নায়িকার রোলটা পেতেই পারে, কনট্র্যাক্টে নাকি টাকার জায়গাটা ব্ল্যাঙ্ক রাখা হয়েছে যেটা হৈমন্তি নিজে ফিল করবে।

দামোদর ফোনটা রেখে একটু সিটে বসে রইলেন। নাঃ চারিদিকে ব্যাপার স্যাপার বেশ জটিল হয়ে উঠছে। তাঁর যে এতো শত্রু চারিদিকে তা জানা ছিল না। আর দেরি নয়, এসপার কি ওসপার, বাড়ীতে এবার একটা বড় পার্টি ডাকতেই হয়।

*********

 

শনিবার সেই বিশাল পার্টি। মুম্বাইয়ে লোকে পয়সা ধার করেও বড় পার্টি দেয়। এটাও প্রায় সেই রকম। দামোদরের “ডালমিয়া টকিজ”-এর সময় খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, কিন্তু আজ এই পার্টিতে মুম্বাইয়ের মুভি জগতের কে নেই। স্টার কমলেশ খান্না, ভানুপ্রিয়া, পারভিন ট্যান্ডন, জামির খান, সঞ্জয় বাট, শাহরুর খান, সুরকার বিপুল দেববর্মন, বাবি লাহিড়ী, প্রডিউসার মিল্টু আনন্দ, তনভির কাপুর … সবাই প্রেসেন্ট। আরো আছে প্রেস থেকে আসা বেশ কিছু সাংবাদিক। গম্ভীর মুখে এদিক ওদিক ঘুরছে হৈমন্তি, দামু কেন হঠাৎ এই পার্টি ডাকল তা সে বুঝতেই পারছে না। সে প্রায় রোজই গসিপ ম্যাগাজিন পড়ে, কাজেই প্রেসে তার আর দামুর ডিভোর্সের ব্যাপারে অনেক খবর সে পড়েছে। পড়ে আর সুযোগ পেলেই কমলেশ আর তনভিরকে এস.এম.এস. করে, ওরা তিনজনে একসাথে হাঁসে।

প্ল্যানটা প্রথমে তনভির-এর মাথাতেই এসেছিল। একদিন তনভিরের এক পার্টিতে ওরা তিনজন বসে মার্টিনি খাচ্ছিল, এই সময়ে হৈমন্তি বলেই বসেছিল যে দামোদরের সাথে লাইফ বড় বোরিং। একে দামু ওল্ড মাইন্ডসেট তার ওপর আবার দেনায় ডুবে আছে, কাজেই সারাক্ষণ কি করে পরের ছবিটা হিট করা যায় সেদিকেই প্ল্যান করে যাচ্ছে। ওর লাইফে কোন এনজয়মেন্ট বা অ্যাডভেঞ্চার নেই।

হৈমন্তি জানতই যে তনভির তার প্রেমে পড়েছে, কাজেই এই ছোট একটু হিন্টসেই কাজ হয়েছিল, তনভির আর কমলেশ প্ল্যানটা ছকে ফেলেছিল। দামুকে তো সহজেই কাত করা গিয়েছিল, প্ল্যানের শেষ ছকটা ছিল কোর্টে, সেখানে ডিভোর্সের মামলা উঠবে, দামু ব্যাভিচারের মামলা আনবে আর কমলেশ কিছুটা দোষ ঘাড়ে নিয়ে হৈমন্তিকে ফ্রি করে দেবে। কমলেশ এই সব ব্যাপারে বিশেষ লজ্জা টজ্জা পায় না, ওর জীবনে এমনিতেই অনেক স্ক্যান্ডাল। একবার ফ্রি হয়ে গেলে হৈমন্তি নিজের মতো থাকবে এই তার প্ল্যান, তারপর মরুক তনভির। সে নিজের কাজ নিজে ঠিক করবে, কার সাথে কাজ করবে, কোন ব্যানারে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। দামু যা শুরু করেছে, তনভির যে একই রকম করবে না তার গ্যারান্টি কোথায়!

কিন্তু কোথায় মামলা, দামু-তো সারাদিন ফোন কানে করেই ঘুরে ব্যারাচ্ছে। আজকেও কেমন হেঁসে হেঁসে গেস্টদের আপ্যায়ন করছে। এই মাত্র গেট দিয়ে ঢুকলেন বিগত দিনের বিখ্যাত নায়ক রনিতাভ বচ্চন। দামু বচ্চনকে নিয়ে গিয়ে বসাতেই দামুর বেস্ট ফ্রেন্ড আর লইয়ার ভিভেক আলুওয়ালিয়া এসে গেলেন তার সেই অ্যান্টিক রোলস-রয়েস চেপে।

ব্যাস, পার্টি পুরদমে শুরু। হৈমন্তী খানিকটা হতাশ হয়ে এক পেগ হুইস্কি নিয়ে কমলেশ, তনভির, জামির, পারভিন এদের আড্ডায় এসে যোগ দিল। তনভির একবার চোখ দিয়ে ইসারা করে জানতে চাইল একচুয়ালি কি হচ্ছে। হৈমন্তি একটু স্রাগ করে বুঝিয়ে দিল যে সে কিছুই জানে না।

পার্টি যখন বেশ জমে উঠেছে, তখন ভিভেক চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে উঠলেন, দুবার গলা ঝেড়ে উনি কিছু বলতে চাইলেন। সবাই যখন চুপ, তখন তিনি পকেট থেকে কয়েক পাতা কাগজ বার করে বললেন …

ভিভেক। আই হ্যাভ অ্যান অ্যানাউন্সমেন্ট টু মেক।

সবাই তাকিয়ে আছে, হৈমন্তির বুকটা একটু ঢিব ঢিব করছে, এ আবার কি নাটক। স্যুটিং-এর সময় যেরকম রেগে ছিল, কোথায় কোর্টে গিয়ে মামলা করবে, তা না ক্রেট ক্রেট হুইস্কি আর শ্যাম্পেন কিনে দেনা বাড়াচ্ছে। এখন আবার কিসের অ্যানাউন্সমেন্ট কে জানে। আলুওয়ালিয়া বলে চললেন …

ভিভেক। আমার ফ্রেন্ড এবং ক্লায়েন্ট দামোদর ডালমিয়া একটি উইল করেছেন। মানুষের উইল সাধারনতঃ গোপন রাখা হয় কিন্তু দামুর ইচ্ছা মতো আমি সেটা আপনাদের পড়ে শোনাচ্ছি। সেই উইলে বলা আছে যে দামোদর তার এই বসত বাড়ী আর ব্যাঙ্কের সামান্য কিছু টাকা বাদ দিয়ে বাকি আর সমস্ত সম্পত্তি এবং তার ব্যাবসা তার স্ত্রী হৈমন্তিকে লিখে দিচ্ছেন। এখন যার বাজার মূল্য একশ কোটি টাকারও বেশি।

ঘরে মধ্যে তখন নিথর নিস্তব্ধতা, এতদিনের রাগ, গালাগালি, ডিভোর্সের হুমকি এসব থেকে এ আবার কি? হৈমন্তির বুক ঢিবঢিব একটু বেড়ে গেল, সে তো মুক্তি চেয়েছিল, তার জন্যই এতো কান্ড, কিন্তু তার বদলে এ আবার কি? তনভিরের মুখটা একটু লাল, টেকো দামোদরের ছক্কা পাঞ্জা সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু ভিভেক আবার গলা ঝেড়ে কিছু বললেন …

ভিভেক। এর মধ্যে অবশ্য একটা সামান্য শর্ত আছে। সমস্ত সম্পত্তি হৈমন্তির নামে চলে যাবে যখন সে দামোদরের ঔরষে সন্তান প্রসব করবে এবং সেই সন্তানের বয়স আঠার বছর হবে।

ঘর সম্পূর্ন নিঃস্তব্ধ, শুধু পিছনের দিকে যারা বসে আছে তাদের কেউ একটু খুক খুক করে কাশল। হৈমন্তি আর তনভির কেমন বোকার মতো তাকিয়ে। ভিভেক কাগজ হাতে এখন দাঁড়িয়ে। সে আবার বললো …

ভিভেক। আর বিশেষ কিছু বলার নেই, একটা ছোট্ট সংযুক্তি, হৈমন্তি আর দামোদরের বিয়ের চুক্তি অনুসারে হৈমন্তি যদি নিজের ইচ্ছায় ডিভোর্স চায় তাহলে ডালমিয়া টকিজ-এর কো-ওনার হিসাবে এই নতুন ছবি “ইয়ে হ্যায় মোহব্বত”-এর প্রোডাকশানের আর্দ্ধেক খরচ অর্থাৎ চল্লিশ কোটি টাকা দামোদরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। এছাড়া আমার ক্লায়েন্টের আর কিছু বলার নেই।

এমন সময় হঠাৎ বেশ জোরে দুবার ওয়াক ওয়াক করে শব্দ হোল, কিভাবে বিষম খেয়ে হৈমন্তি তার চেয়ারের পাশেই বমি করে ফেলেছে। পাশেই তনভির, মাথাটা চেয়ারে কেমন হেলে রয়েছে, ঠোঁটের কোনে একটু ফ্যানা, চোখ বন্ধ … অজ্ঞান হয়ে গেছে কিনা কে জানে। তার পাশে কমলেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছে, হাতে একটা আধ খাওয়া হুইস্কির গেলাস।

আর দামোদর … ! পুরো হিস্টিরিয়া, হাতে একটা পানীয়ের গেলাস নিয়ে ঠিক ভিভেকের পাশে বসে সে হেসেই চলেছে। নেশায় আচ্ছন্ন একদমই নয়, কিন্তু হি হি করে তার সেই কান এঁটো করা হাঁসি আর থামতেই চায় না, মোটা শরীরটা যেন ছন্দে ছন্দে কাঁপছে। এ যেন তাঁর চোখের সামনে চার্লি চ্যাপলিনের মুভি চলছে। কি বিপদ, লোকটা পাগল হয়ে গেল নাকি।

~ শেষ ~

 

~ প্যাঁচ ~

Print Friendly, PDF & Email
Previous articleপ্যাঁচ
Next articleশীতাতঙ্ক (পর্ব ১ )
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments